আমরা সবাই আমাদের শরীরকে ফিট রাখতে পছন্দ করি। কিন্তু ফিট না রাখতে পারার সব থেকে বড় বাধা হলো আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন। ওজন বৃদ্ধির সাথে আমাদের শরীরে শুধু সৌন্দর্যই নষ্ট হয় না এর সাথে নানা রকম রোগের সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের সবার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
অতিরিক্ত ওজনের ফলে আমাদের শরীরে নানা রকম জটিলতা দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির মূল কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন যাপন। অনেকে নানা রকম ভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন। কেউ ডায়েট করে, কেউ কম খাবার খেয়ে, আবার কেউবা ব্যায়াম করে। ওজন কমানোর জন্য আপনাকে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং পদক্ষেপ অনুসরণ করে চলতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমাতে ঔষধি গাছের গুনাগুন।
১.আমিষযুক্ত খাবার গ্রহণ
ওজন কমানোর একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে প্রতিদিন আপনাকে অবশ্যই আমিষযুক্ত খাবার খেতে হবে। আমিষযুক্ত খাবার খেলে অল্প খাবারে খুব তাড়াতাড়ি তৃপ্তি আসে এবং ক্ষুধা নিবারণ হয়। কারণ আমিষযুক্ত খাবার হজম হয়ে দেরি করে। যার ফলে আমাদের পাকস্থলীতে দীর্ঘ সময় খাবার অবস্থান করে। তাই আমাদের হঠাৎ ক্ষুধার তীব্র অনুভূতি কমিয়ে দেয়।
২.চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার
চর্বিযুক্ত খাবার আপনার শরীরের বাড়তি মেদ বা ওজন বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। চর্বিযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে কোমল পানীয়, বাদাম জাতীয় খাবার, তেল জাতীয় খাবার, বিভিন্ন ফাস্টফুড ইত্যাদি। এগুলো আমাদের শরীরে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট বা ফ্যাট হিসেবে জমা হয়। তাই যাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন বা মেদ রয়েছে তাদেরকে এসব খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
৩.সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে
সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে এবং পুষ্টিতে ভরপুর। বেশি বেশি সবুজ শাকসবজি খাওয়ার ফলে আপনার শরীর স্বাস্থ্যকর থাকবে। এছাড়া সবুজ শাকসবজিতে কম ক্যালরি থাকে। এতে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না। কম ক্যালরিযুক্ত শাকসবজির মধ্যে অন্যতম হলো শাক, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শসা ইত্যাদি। আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এই শাক সবজিগুলো রাখা প্রয়োজন।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশি করে ফলগুলো ও শাকসবজি খেলে ওজন কমে। এর কারণ হলো শাকসবজি এবং ফলগুলিতে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে। যা হজম কমিয়ে পেটের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। ফাইবার গুলি হজম হতে সময় নেয় তাই ব্যাক্তিদের কিছু সময়ের জন্য পেট পূর্ণ মনে করেন।
৪.পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
ওজোন কমানোর জন্য প্রতিদিন খাওয়ার আগে খালি পেটে পানি পান করা খুবই জরুরী। পানি ১-১.৫ ঘন্টার মধ্যে ২৪-৩০% হজমশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে। সাবমেড সেন্ট্রাল এর একটি গবেষণা অনুসারে, যারা খাবারের আধাঘন্টা আগে 0.5 লিটার পানি পান করেন তাদের ওজন ৪৪% বেশি কমে যায়।
৫.গ্রিন টি পান করা
ব্ল্যাক কফির মত গ্রিন টি ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। গ্রিন টি তে ক্যাফিন এর মাত্রা কম থাকে। কিন্তু ক্যাটেইন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর থাকে। এই এন্টি অক্সিডেন্ট গুলি ক্যাফেইনের সাথে এক হয়ে কাজ করে এবং চর্বি বার করা বাড়িয়ে দেয়। গ্রিন টি দ্রুত ওজন কমানোর উপায় হিসেবে খুব জনপ্রিয়। আপনি যদি প্রতিদিন নিয়ম করে এক কাপ গ্রিন টি পান করেন তাহলে দ্রুত ওজন কমাতে পারবেন।
৬.নিয়মিত হাঁটাচলা করতে হবে
আমাদের ওজন বেড়ে যাওয়া অনেক বড় একটি কারণ হচ্ছে আমরা সবসময় বসে থাকি। অর্থাৎ ভালোমতো হাঁটাচলা করি না। আপনারা যদি ঘরে বসে থাকেন এবং হাঁটার সময় না পান তবুও সময় বের করে দিনে অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটবেন। এই হাঁটার কাজটা সকালে করলে খুব ভালো হয়। যদি আপনি নিজে পরিশ্রম না করেন তাহলে আপনার শরীরের ভেতর অনেক চর্বি জমে যাবে যেগুলো আপনার ওজন খুব দ্রুত আরো বাড়িয়ে দিবে।
৭.নিয়মিত ব্যায়াম করা
ওজন কমাতে হলে ডায়েট যেমনপরিবর্তন আনতে হবে ঠিক তেমনি আপনাকে অবশ্যই কিছু ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম করলে শুধু ওজন কমেই না এটি আমাদের শরীর অনেকটা সুস্থ থাকে এবং রোগবালা দূর হয়। সকালে উঠে হাটা একটি ভাল ব্যায়াম। এছাড়া আপনি যেকোনো ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন। যেমন দৌড়, ভার উত্তোলন, স্কোয়ার্ড, রোয়িং, হ্যামকার্ল ইত্যাদি।
৮.ওজন কমাতে ঘুমের ভূমিকা
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা হলো দ্রুত ওজন কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক 6 থেকে 8 ঘন্টা গভীর ঘুমের প্রয়োজন। এর বেশি ও শরীরের জন্য ভালো না কম ও শরীরের জন্য খারাপ। তাই দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই ভালো ডায়েট এবং ব্যায়ামের পাশাপাশি ভালো ঘুমের ওপর জোর দিতে হবে। এছাড়া রাতে ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগে আপনাকে রাতের খাবার শেষ করতে হবে।
৯. ফাস্টফুড থেকে দূরে থাকতে হবে
আমরা মূলত বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এর খাবারে বিভিন্ন ফাস্টফুডের দিকে খুবই আসক্ত। এসব খাবার দেখলে আমরা ঠিক থাকতে পারি না। কিন্তু এ সকল খাবার আমাদের শরীরের জন্য যেমন খারাপ তেমনি শরীরের মেদ অনেকটা বাড়িয়ে আপনাকে মোটা বানিয়ে ফেলবে। মনে রাখতে হবে একবার বেশি মোটা হয়ে গেলে সেখান থেকে ফেরত আসা খুবই কষ্টসাধ্য কাজ। তাই প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধে উত্তম।
১০.যে সব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
স্বাস্থ্যকর ও দীর্ঘস্থায়ীভাবে ওজন কমাতে ডায়েট হতে কিছু খাবার বাদ দিতে হবে। এগুলো হলোঃ
- চিনিযুক্ত পানীয়
- পেস্ট্রি
- কুকিজ এবং কেক
- ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং চিপস
- নির্দিষ্ট ধরনের অ্যালকোহল
- উচ্চ ক্যালোরি কফি পানীয়
- চিনিযুক্ত খাবার
- সাদা ভাত (অল্প পরিমাণে খাওয়া যাবে)
- মিষ্টি দই
- প্রক্রিয়াজাত মাংস
- মিশ্রিযুক্ত শুকনো ফল
শেষ কথা
আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল কিভাবে আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন দ্রুত কমানো যায়। এ সম্পর্কে আপনাদের সাথে দশটি টিপস শেয়ার করেছি। এ অভ্যাসগুলো আপনার ওজন কমানোর পাশাপাশি আপনাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। এছাড়াও আপনাকে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে অনেক সময় আমাদের অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে আমাদের শরীরের ওজন বেড়ে যায়।উপরের নিয়ম গুলো ঠিকভাবে মেনে চললে আশা করি ভালো ফল পাবেন।