শীতকালীন সবজি
শীতকালে সুস্থ থাকতে যে খাবার গুলো অবশ্যই খাবেন

সারাদেশে শীত এখন জেগে বসেছে। এই শীতে অনেকেই সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হন। এর বাইরে শীতের বৈরী আবহাওয়া ত্বকের জন্য বয়ে আনে নানা ধরনের সমস্যা। পাশাপাশি অনেক সময় ত্বকে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের রোগ। কিছু চর্ম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এই সময়। শীতেকালে কিছু খাবার আপনাকে সজীবতা ও সুস্থতা দেবে।

শীতকালে শরীরের যত্নের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করে শীত উপভোগ করার জন্য নিয়মিত কিছু খাবার খাওয়া দরকার। তাই আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা জানবো শীতকালে কোন খাবার গুলো খাওয়া উচিত? যা আপনাকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। এসব কিছু জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

শীতে সুস্থ থাকতে যে ১০টি খাবার অবশ্যই খাবেন

শীতকালে শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখাটাই একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ সময় বিভিন্ন কারণে ঠান্ডা লাগা, কাশি, গলা ব্যথা ও স্কিনের নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। এইসব সমস্যা যাতে আপনাকে কাবু করতে না পারে তার জন্য নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শীতের জন্য বিশেষ ধরনের খাবার আছে। যা দেহের শক্তি বৃদ্ধি করতে ও বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

সিদ্ধ ডিম

শীতকালে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে ও সতেজ রাখতে সিদ্ধ ডিমের ভূমিকা অনবদ্য। ডিম পুরো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি খাবার। ডিমে রয়েছে অনেক কার্যকরী উপাদান যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নয়টি অ্যামাইনো অ্যাসিড।

বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন যেমন- ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, জিঙ্ক, ফসফরাস এবং প্রয়োজনীয় মিনারেলস পাওয়া যায়। এখানেই শেষ নয়, ডিমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও আয়রন। বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে ডিম যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রাখে। শীতের খাবার হিসেবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম রাখতে পারেন। তবে উপযুক্ত উপকার পেতে প্রতিদিন সকালে সেদ্ধ ডিম খেতে হবে।

গাজর

শীতকালে খাবারের মধ্যে গাজর হচ্ছে অন্যতম। গাজরকে বলা হয় “সুপার ফুড”। গাজরে রয়েছে শর্করা, প্রোটিন, ফাইবার, থাইমিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি। এজন্যই এটি একটি পুষ্টিগুণ খাবারের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া গাজোরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। এটি বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই শীতকালে নিয়মিত গাজর খাওয়া উচিত।

পালং শাক

শীতকালে বাজারে প্রচুর পরিমাণে পালং শাক পাওয়া যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও শীতে সুস্থ থাকতে পালং শাক খেতে পারেন। পুষ্টিতে ভরপুর পালং শাক এন্টি অক্সিডেন্ট ও ক্যান্সার প্রতিরোধে গুণের কারণে এটি ও সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। এছাড়া পালংশাক পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এতে ভিটামিন ও মিনারেল আছে এবং ক্যালরি কম থাকে, তাই ওজন কমাতে খাবারে বেশি করে পালং শাক রাখতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ওজন বেশি তারা নিয়মিত পালং শাক খেলে বাড়তি ওজন কমে যায়।

খাঁটি মধু

শীতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার হচ্ছে খাঁটি মধু। শীতের সময় দেহকে সুস্থ রাখতে মধুর ভূমিকা অনবদ্য। মধু অনেক ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। প্রায় সব ডাক্তারই শীতের সময় নিয়মিত মধু খাওয়ার পরামর্শ দেন। জ্বর ও ঠান্ডা প্রতিরোধে মধু সবচেয়ে নিরাপদ খাবার। মধুতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। তাই ঘুমানোর আগে ও সকালে নাস্তার সময় নিয়মিত মধু খেতে পারেন।

গ্রিন টি

গ্রিন টি তে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। শীতের সময় দিনে দুই থেকে তিন কাপ গ্রিন টি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। তবে গ্রিন টি কখনো খালি পেটে খেতে যাবেন না। সকালে বা বিকেলে হালকা কিছু খাবার খাওয়ার পরে আপনি গ্রিন টি পান করতে পারেন। তাহলে দেখবেন আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আপনি সুস্থ আছেন।

স্যুপ

শীতকালে শরীর সুস্থ রাখতে স্যুপ দারুণ উপকারী। শীতকালে স্যুপের আসল মজা। শীতের সকালে বা রাতে ধোঁয়া ওঠা একটি সুপের বাটি হলে কিন্তু মন্দ হয় না। এতে শরীর থেকে একটু হলেও কাটবে ঠান্ডার রেস। শরীর সুস্থ রাখতে শীতের সময় নানান সবজি, ডিম আর মুরগির মাংস দিয়ে সুপ বানিয়ে খেতে পারেন।

মাছ

শীতকালে বেশি করে মাছ খান। মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ। আমিষের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন দুই বেলা মাছ খেতে পারেন। খাবারের তালিকায় সপ্তাহে অন্তত দুই দিন সামুদ্রিক মাছ রাখুন। এছাড়া মাছের সঙ্গে সবজি রান্না করে খেতে পারেন। মাছের ঝলে বিভিন্ন সবজি দারুন মানায়।

সবুজ শাকসবজি

শীতের সময় অনেক ধরনের শাকসবজি পাওয়া যায় যেমন- লাল শাক, মুলা শাক, বাঁধাকপি,ফুলকপি, টমেটো ইত্যাদি। এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি পাওয়া যায় শীতের সময়। এগুলো বেশি বেশি খাওয়া প্রয়োজন। কারণ এইসব শাকসবজির গুলোর মধ্যে রয়েছে অনেক পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম সহ আরো কার্যকারী উপাদান।

যা শরীর সুস্থ রাখতে, শক্তি বৃদ্ধি করতে, শরীরের গঠন বাড়াতে ও ত্বক সতেজ রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। শীতের শাক সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার তাই শীতের পুরোটা সময় ধরে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাবার চেষ্টা করুন। এতে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে।

বাদাম

বিভিন্ন রকমের বাদাম যেমন চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম ইত্যাদি খেতে পারেন। এসব বাদামে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ফাইবার প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। যা আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে এবং শীতের সময় আপনাকে চাঙ্গা রাখবে।

টক ফল

শরীরে ফাইবার বা আঁশের ঘাটতি মেটাতে ভিটামিন সি এর যোগান দিতে শীতের সময় বেশি করে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। কমলা, বরই, পেয়ারা হতে পারে ভিটামিন সি এর দারুন উৎস। পেয়ারা এসব থেকে বেশি ভিটামিন সি থাকে। যা অনেক বেশি প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে আরো থাকে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।

শীতকালে সুস্থ থাকতে গড়ে তুলুন এই অভ্যাস গুলি

  • ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গ্রহণ
  • রান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করতে হবে
  • ঘুমানোর আগে গরম পানি পান করা
  • ত্বক ও চুলের যত্ন
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
  • গোসল করা
  • ধূমপান ত্যাগ করা
  • গরম পোশাক পরিধান

শীতে কোন কোন রোগ গুলি বাড়ে?

গলা ব্যথা ও কাশিঃ শীতকালে কম বেশি প্রায় সবারই গলা ব্যথা ও কাশি হয়ে থাকে। মূলত ঠান্ডা লাগার কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। গলা খুসখুস করে, কিছুক্ষণ পরপর কাশি হতে থাকে এবং ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসার মতো নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
টনসিলঃ শীতের ঠান্ডা বাতাস আমাদের টনসিল গ্রন্থির জন্য খুবই ক্ষতিকর। ঠান্ডা বাতাসে টনসিল গ্রন্থিতে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের দ্বারা ইনফেকশন তৈরি হয়। যার ফলে গলা ফুলে যায়, গলা ব্যথা ও ঢোক গিলতে কষ্ট হয়। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ঠান্ডা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন এবং গরম পানি খেতে হবে।
স্নায়ু রোগঃ শীতকালে আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল কম হয়। যার ফলে হাত পা প্রায় সময় ঠান্ডা হয়ে থাকে। এতে আমাদের নার্ভ ঝুকিতে থাকে। এমনকি রক্তশূন্যতার রোগীরা ও বৃদ্ধরা নার্ভের জটিলতায় ভোগেন। অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগলে নার্ভের পাশাপাশি মাংসপেশি ও হাড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এলার্জিঃ শীতের সময় শুষ্কতায় কারণে আমাদের ত্বক সবসময় সুস্থ হয়ে থাকে। এতে আমাদের শরীরে মাঝে মাঝে চুলকানি ও ব্যথা অনুভব হয়। এলার্জির কারণে তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের আদ্রতা কমে গেলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে ওঠে। তাই এই সময় অ্যালার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন ত্বকের বিশেষ যত্ন।
সুস্থ থাকার জন্য এই পরিবর্তন নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে একটু সচেতন হতে হবে। কিন্তু শীতে অসুস্থ হওয়া ঠেকাতে পারে সঠিক নিয়মে জীবন যাপন ও শীতের কিছু সবজি, যা খেলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাইরে থেকে যত্নের পাশাপাশি চাই ভেতর থেকে সুস্থতা।তাহলে বুঝতেই পারছেন শীতকালে কোন অভ্যাস গুলি ও খাবারগুলো আপনাকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।