অধিক পুষ্টিগুনে ভরপুর রসুন। রসুন প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধরে মসলা ও খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমান তথ্য অনুযায়ী রসুনকে স্বাস্থ্য রক্ষা ও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রসুন আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান।
ভূমিকা
রসুনের বৈজ্ঞানিক নাম Allium sativum রসুন সাধারণত দুই রকমের হয়ে থাকে। এক কোষ বিশিষ্ট রসুন এবং বহু কোষ বিশিষ্ট রসুন। সাধারণত এক কোষ বিশিষ্ট রসুনের দাম বেশি এবং বহুকোষ বিশিষ্ট রসুনের নাম সহজলভ্য এবং এই রসুন ধাঁঝালো হয়ে থাকে। আপনার শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ম্যাজিক এর মত কাজ করে এক কোয়া রসুন। তাই আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
রসুনের ১০টি উপকারিতা
রসুনের এত উপকারিতা যে রসুনকে মরণের অমৃত বলা হয়। আয়ুর্বেদে রসুনকে ঔষধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রশংসা সাধারণত মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও প্রাচীনকাল থেকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। বিভিন্ন রোগের প্রতিকার হিসেবে রসুন খুবই কার্যকরী। রসুনে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
১। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে
সুগার হলো একগুচ্ছ রোগের সমাহার। এই রোগের ফলে রক্তে গ্লকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। ইন্সুলিনের অসামরনের ফলে মূলত এই রোগ হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে, রসুনের মধ্যে এলেসিন নামক এক প্রকার কম্পাউন্ড থাকে যা ইনসুলিন এর ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে সুগার কমে খুব সহজেই। এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই থেকে তিন কোয়া রসুন খেতে হবে। চিবিয়ে খেতে না পারলে কুচি কুচি করে গিলে খেতে পারেন।
২। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে
রসুন LDL ও টাই গ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে এবং HDL বাড়াতে সাহায্য করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, রসুন লিভারে কোলেস্টেরলের সংখ্যা কমিয়ে দেয় এবং কোলেস্টরেলকে শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করে দেয়।
৩। হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়
৪। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে
সারা বিশ্বে 13.5% মানুষ মারা যায় উচ্চ রক্তচাপের কারণে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী, রসুনকে একটি উত্তম হাই ব্লাড প্রেসারের ঔষধ হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে রোগটি প্রবল আকারে দেখা দেওয়ার পর রসুন খাওয়া আরম্ভ করলে পারদের মাত্রার মতো তরতর করে নিচে নেমে যাবে সেই আশা করবেন না। হাই ব্লাড প্রেসার এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসার জন্য অন্য ওষুধ চলবে সেইসঙ্গে রসুন খেতে হবে। সকালে খালি পেটে দুই থেকে তিন কোয়া রসুন খেতে পারেন।
৫। প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে
গবেষণায় দেখা গেছে, খালি পেটে রসুন খেলে তা শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। তাই আপনার দেহের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কে দূর করতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেতে পারেন। যা ম্যাজিকের মতো আপনার দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং আপনার শরীর থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বের করে দিবে।
৬। যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে
আমাদের বাহ্যিক খাদ্য অভ্যাস ধূমপান, অ্যালকোহল, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন ও শারীরিক পরিশ্রম এর অভাবে দিন দিন হেলদি শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে হেলদি শুক্রাণু তৈরিতে রসুনের উপকারিতা ব্যাপক। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেলে যৌন অক্ষমতা দূর হবে এবং আপনার যৌন শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
৭। বাত নিয়ন্ত্রণ করে
বাত রোগের জন্য রসুন খুবই কার্যকরী। যদি আপনার শরীরের গিঁটে গিটে ব্যথা, সকালের দিকে হাত পায়ের আঙ্গুলে অবস হওয়ার অভ্যাস থাকে সে ক্ষেত্রে অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়ার অভ্যাস করুন। রসুন কুচি কুচি করে কেটে রেখে ১০-১৫ মিনিট পর খেতে পারেন। এছাড়া গিঁটে ব্যথা ও যন্ত্রণা উপশমের জন্য রসুনের তেল মালিশ করতে পারেন।
আরো পড়ুন: ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা
৮। দাঁতের যন্ত্রণা কমায়
দাঁতের যন্ত্রণা কমাতে রসুন বেশ কার্যকরী একটি উপকরণ। রসুন থেঁতো করে দাঁতের গোড়ায় লাগিয়ে হালকা ভাবে মাসাজ করলে উপকার পাওয়া যায়। আর হঠাৎ করে যদি দাঁতের যন্ত্রণা দেখা দেয় বা মাড়ি ফুলে যায় তাহলে এক কোয়া রসুন চিবিয়ে তাদের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। এর পর থেকে যন্ত্রণা ও ব্যথা কমতে শুরু করবে। এছাড়া পাইরিয়া সারাতে রসুন ভালো কাজ করে।
৯। যক্ষা নিরাময় করে
যক্ষা রোগের অত্যাধুনিক ওষুধ বারবার ব্যবহার করা হচ্ছে বারবার ভালো হচ্ছে কিন্তু যক্ষা নিরাময় হচ্ছে না। আবার কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় ঔষধ আর কাজে দিচ্ছে না। রোগীর অবস্থা ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠে। এরকম ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে রসুন খাওয়া যেতে পারে। এরপর রোগ সারলে আবার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। এক্ষেত্রে রসুনের রস কয়েক ফোটা পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার খাওয়ানো যেতে পারে।
১০। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
বর্তমানে বহু মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। পুরুষ ও মহিলাদের ক্যান্সার দিন দিন ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। সে ক্ষেত্রে নানাভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, রসুন ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে এবং নিয়মিত রসুন খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। রসুন মুখ, পরিপাকতন্ত্র, লিভার, ফুসফুস, কোলন ও জরায়ু ইত্যাদি ক্যান্সারের খুব ভালো কাজ করে। কারণ রসুন ক্যান্সার কোষের বিভাজনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। রসুনে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের জন্য ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলস গুলোকে ধ্বংস করে দেয়।
আরো পড়ুনঃ জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার।
রসুন খাওয়ার নিয়ম
রসুন কাটার পরে খোলা জায়গায় রেখে ১৫ মিনিট পরে কাঁচা খেতে পারেন অথবা তরকারিতে ব্যবহার করে খেতে পারেন। এছাড়া রসুন কুচি কুচি করে খাওয়া যেতে পারে। কারণ রসুন কেটে রাখার পরে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে রসুনের মধ্যে থাকা জালা সৃষ্টিকারী সাল্পনিক এসিড দ্রুত ভেঙে গিয়ে এলিসিনে পরিণত হয়। তাই রসুন কাটার পরে খোলা জায়গায় রেখে ১০-১৫ মিনিট পরে ব্যবহার করতে পারেন। এতে রসুনের উপকার খুব দ্রুত পাওয়া যায় এবং শরীরের জন্য ভালো।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমানোর উপায়।
রসুনের অপকারিতা
- খালি পেটে রসুন খাওয়া যাবেনা
- গর্ভবতী মহিলারা রসুন খাওয়া থেকে দূরে থাকবেন
- শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েরা রসুন খাবেন না
- নিম্ন রক্তচাপ হলে রসুন খাওয়া যাবে না