জন্ডিস এমন একটি রোগ যা প্রায় সব বয়সের মানুষদেরই হয়ে থাকে। জন্ডিস অনেকটা কলেরা বা ডায়রিয়ার মতো। যা আগে থেকে বিদ্যমান স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে বিকাশ লাভ করে। যদি সঠিক সময়ে জন্ডিস প্রতিকারের পদক্ষেপ নেওয়া যায় তাহলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এটি সেরে যায়। তাই আমাদের সবার জেনে রাখা প্রয়োজন কিভাবে আমরা জন্ডিস থেকে বাঁচতে পারব।
জন্ডিস কি?
জন্ডিস কোন রোগ নয় রোগের লক্ষণ মাত্র। জন্ডিস শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ যোনিস থেকে যার অর্থ হলো হলদেটে। জন্ডিস হলে ত্বক ও চোখে সাদা অংশ এবং অন্যান্য মিউকাস জেলি হলুদ হয়ে যায়। মানবদেহের রক্তে লোহিত কণিকা গুলি স্বাভাবিক নিয়মে একটা সময় ভেঙে যায় যা পরবর্তী সময়ে লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সঙ্গে মিশে পরিপাকতন্ত্রের প্রবেশ করে। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কোন কারণে ব্যাহত হলে জন্ডিস দেখা দেয়।
জন্ডিস কেন হয়?
জন্ডিস রোগের লক্ষণ
- চোখের সাদা অংশ এবং ইউরিন এর রং হলুদ হয়ে যায়
- শারীরিক দুর্বলতা ও খিদে কমে যায়
- জ্বর জ্বর অনুভূতি বা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা
- বমি বমি ভাব
- ওজন কমে যায়
- শরীরে বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি
- মাথা ব্যথা ও জ্বর
জন্ডিস প্রতিকারে কার্যকরী যে ৭টি খাবার
২.আমলকিঃ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। জন্ডিস কমানোর জন্য আমলকি খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। আমলকি যকৃতের কোষকে সক্রিয় করে তুলতে সাহায্য করে। তবে আমলকি কাঁচা খাওয়ার চেষ্টা করবেন। শুকনো আমলকির চেয়ে কাঁচা আমলকি বেশি কার্যকরী। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, আর এই ফাইবার পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৩.আখের রসঃ জন্ডিসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রে আখের রস আপনার অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে। প্রতিদিন নিয়ম করে এক গ্লাস আখের রস খেতে পারলে যকৃতের কার্যক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। তাই আপনার লিভার সুস্থ রাখতে আপনি প্রতিদিন আখের রস খেতে পারেন। তবে রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া আখের রস একদম খাবেন না।
৪.লেবুর রসঃ লেবুতে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। লেবু পিত্তনালী পরিষ্কার করে। খালি পেটে যদি পাতি লেবুর রস খান তাহলে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। এছাড়া হালকা গরম পানিতে লেবু এবং সামান্য পরিমাণে লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন।
৫.গাজরঃ এতে প্রচুর পরিমাণে বিটা করোটিন আছে। এছাড়া ভিটামিন এ এবং সি রয়েছে। বিটা ক্যারোটিন খারাপ কোলেস্টরেলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও গাজর কিন্তু যকৃতের অবাধ কাজে সাহায্য করে থাকে। তাই অল্প পরিমাণে গাজর আপনার ডায়েট এ অবশ্যই রাখুন। এতে সুফল পাবেন।
৬.বেদেনাঃ এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এমনকি এতে সোডিয়াম পাওয়া যায়। যা জন্ডিস কমাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত অল্প পরিমাণে আপনার ডায়েটে যোগ করতেই পারেন বেদেনা। এছাড়া বেদেনের রস জুস করে খেতে পারেন।
৭.কাঠবাদামঃ প্রতিদিন যদি দুই থেকে চারটি করে ভেজানো কাঠবাদাম খাওয়া যায় তাহলে যকৃতের স্বাভাবিক কাজ অক্ষুন্ন রাখা সহজ হয়। কাঠবাদাম শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয় এবং শরীরে শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন: রোগ নিরাময়ে আদার উপকারিতা।
আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে কোন খাবারগুলো রাখতে পারবেন
জন্ডিস হলে রোগীর খাবার কি হবে তা নিয়ে অনেকের ভেতর অনেক বিভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। জন্ডিস হলে এমন খাবার খাওয়া উচিত যেন যকৃত ও পিত্তথলি ওপর কোনো চাপ না পরে। এর জন্য আমাদের খাদ্য তালিকায় কিছু শাকসবজি রাখতে পারি যেমন- মিষ্টি আলু, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, লাল শাক, পুঁইশাক, পালং শাক ইত্যাদি জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই ভালো অনেকে মনে করেন।
জন্ডিসের সময় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়
- কাঁচা লবণ
- দুধ বা পনির
- অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার
- অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার
- অতিরিক্তমসলাযুক্ত খাবার
- অ্যালকোহল
- ফ্যাট যুক্ত খাবার
জন্ডিস হলে যেসব নিয়ম মেনে চলতে হবে
জন্ডিস এমন একটি রোগ যার সঠিক সময় প্রতিকার না হলে পরবর্তীতে ভয়ানক আঁকার ধারণ করে। জন্ডিসে আক্রান্ত হলে রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। এছাড়া তরল জাতীয় খাবার এবং সহজে হজম হয় এই ধরনের খাবার খেতে হবে। এ সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জন্ডিস এর সময় সঠিক নিয়ম মেনে চললে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে জন্ডিস সেরে যায়।