কক্সবাজারের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিন

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হলো কক্সবাজার। পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। এই ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের বিশেষত্ব হলো পুরো সৈকতটি বালুকাময়, কর্দমাক্ত নয়।কক্সবাজারের যেসব দর্শনীয় স্থানসমূহ না গেলে আপনার ভ্রমণটাই বৃথা হয়ে যাবে। এক নজরে জেনে নিন কক্সবাজারের কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য

কক্সবাজার বালুকাময় সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন অত্যাধুনিক হোটেল, কটেজ এবং নতুন সাজে সজ্জিত মার্কেট সহ শামুক ঝিনুক ও নানা প্রজাতির প্রবাল সংগ্রহে পর্যটন মৌসুমে পর্যটকের ভিড় থাকে এই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত একটি মায়াবী ও অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত সমুদ্র সৈকত। এখানে রয়েছে ওয়াটার বাইকিং বিচ বাইকিং, ফিউচার পার্ক, শিশু পার্ক, ইকোপার্ক এবং ফটোশুট স্পট রয়েছে।

কক্সবাজার লাবনী বীচ

কক্সবাজার পুরাতন সমুদ্র সৈকত যা লাবনী পয়েন্ট বা পুরাতন সমুদ্র সৈকত নামের পরিচিত। যা কক্সবাজার কলাতলীতে অবস্থিত। সকল সমুদ্র প্রেমী ছুটে যায় কক্সবাজারের এই সি বিচ টিতে। কক্সবাজার শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় লাবনী সমুদ্র সৈকতকে কক্সবাজারের প্রধান সমুদ্র সৈকত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন এলাকায় ছোট বড় অনেক দোকান রয়েছে যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এছাড়াও পর্যটকদের জন্য এখানে একটি ঝিনুকের মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য সীমান্তবর্তী দেশগুলোই পাহাড়ি সব পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এই মার্কেটটি।

ইনানী সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণে অবিরাম সৌন্দর্য ভরপুর আকর্ষণীয় ও নয়না বিরাম সমুদ্র সৈকত হচ্ছে এই ইনানী সমুদ্র সৈকত। পশ্চিমে সমুদ্র সৈকত আর পূর্বে পাহাড়ের এক অপূর্ব মিলন মেলা জায়গাটিকে করেছে বড়ই বৈচিত্র্যময়। ইনানী সমুদ্র সৈকত প্রবাল প্রাচীর দ্বারা পরিপূর্ণ, অনেকটা সেন্ট মার্টিন এর মতো।

এই সমুদ্র সৈকতে বিভিন্ন খাবারের রেস্তোরাসহ আরো অনেক পর্যটন সুবিধা রয়েছে। সকাল সন্ধ্যা প্রায় সব সময় রয়েছে শুটকি মাছের নানা ধরনের খাবার। বিভিন্ন বয়সের মানুষ এখানে আসে সমুদ্রে গোসল করতে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ইনানী খুবই শান্ত সমুদ্র সৈকত। প্রবাল পাথর ইনানী সমুদ্র সৈকতের প্রধান আকর্ষণ।

হিমছড়ি সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকতটি। হিমছড়ির এক প্রান্তে রয়েছে সবুজ হলুদ রাশির বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত আর অন্য প্রান্তে রয়েছে সারি সারি সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের পাদদেশে বয়ে চলেছে অপরূপ সুন্দর এক হিমশীতল জলপ্রপাত, যা কিনা এখানকার প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।

পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকতটি। পাহাড়ের উপর থেকে চোখে পড়ে দূর থেকে ভেসে আসা নীল জল রাশির ঢেউগুলো যেন আছড়ে পড়ছে সৈকতের উপরে, সে এক অন্যরকম অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। অনেক পর্যটক পায়ে হেটে এই সৌন্দর্য উপভোগ করে।

মহেশখালী পাহাড়ি দ্বীপ

দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী দ্বীপ। কক্সবাজার থেকে মহেশখালী মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যে দ্বীপে রয়েছে ঘন বন জঙ্গল যার বেশিরভাগই হচ্ছে সুন্দরবনের মতো ম্যানগ্রোভ জাতীয়। তাছাড়া দ্বীপের মূল বৈশিষ্ট্য হল চারিদিকে পানি আর মাঝখানে ছোট বড় অনেক উঁচু উঁচু পাহাড়।

মহেশখালীর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম সোনাদিয়া দ্বীপ, আদিনাথ মন্দির, বদ্ধ মন্দির, রাখাইন পাড়া, স্বর্ণমন্দির, মৈনাক পর্বত, শুটিং ব্রিজ অন্যতম। মহেশখালী দ্বীপ শুটকি চিংড়ি লবণ ও মুক্তার উৎপাদনের জন্য সুনাম অর্জন করলেও এখানকার বিখ্যাত হল মিষ্টি পান।

রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড

কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় বিনোদনের এক নতুন সংযোগ এই ফিস মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে সাগর ও মিঠা পানির প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে বিরল প্রজাতির কিছু মাছ সহ হাঙ্গর, পিরানহা, শাপলা পাতা, পান পাতা, সামুদ্রিক শৈবাল সহ নানা প্রজাতির মাছ। এখানে এলে কিভাবে এক নিমেষে সময় কেটে যাবে তা বুঝতেই পারবেন না।

শতাধিক ছোট বড় একুরিয়ামে সাজানো হয়েছে দর্শনীয় অত্যাধুনিক শিল্পকর্মটি। এ যেন সমুদ্রের নিচে এক মাছের জগত। এই ফিস একুরিয়ামটি সম্পূর্ণরূপে ঘুরে দেখতে প্রায় দুই ঘন্টার মত সময় লাগবে। একুরিয়ামটির ভিতর প্রবেশ করলে মনে হবে যেন সাগরের নিচে রয়েছে আর চারিপাশে বিচরণ করছে নানা প্রজাতির মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এই দ্বীপ টি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও উত্তর পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমার উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে কক্সবাজার জেলার নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত।

প্রচুর পরিমাণে নারিকেল গাছ থাকায় স্থানীয়ভাবে এটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত। প্রতিকূল আবহাওয়ায় দারুচিনি বহনকারী একটি জাহাজ চরের নিচে একটি বিশাল পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে বিধ্বস্ত হওয়া যার ফলে দারুচিনি পুরোদীপের ছড়িয়ে পড়ে পড়ে পরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নাম হয়ে যায় দারুচিনি দ্বীপ।

শেষ কথা

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের এক অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ তার রূপ বদলায় এবং পর্যটকদের বিমোহিত করে। শীত বর্ষা বসন্ত বা গ্রীষ্মের মত কোন ঋতু নেই যখন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দৃশ্য বদলাই না। পাখির মতো শূন্যে ভেসে দুহাত প্রসারিত করে সাগর আর পাহাড়ের বুকে হারিয়ে যাওয়াটা যেন জীবনের এক অরণ্য অনুভূতি।

যখন সূর্য পূর্ব দিক থেকে উদিত হয় তখন মনে হয় রক্তিম গোলাকার পৃথিবী যেন সমুদ্রের বুক চিরে বেরিয়ে এসে আমন্ত্রণ জানায় একটি নতুন দিনের।আপনি যদি ভ্রমণ পিপাসু হন তাহলে জীবনে একবার হলেও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ করে যাবেন। আপনার যদি এই লেখাটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত মানুষের সাথে শেয়ার করবেন।