পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সময়-সূচি

নামজ শব্দের অর্থ হলো শুভকামনা, পবিত্রতা , ক্ষমা পার্থনা । মুসলিমদের জীবনে নামাজের গুরুত্ব অপরিহার্য । আল্লাহ তায়ালা বলেছেন , নিঃসন্দেহে সালাত বিশ্বাসীদের ওপর সময়ের সাথে সম্পৃক্ত করে আবশ্যকীয় করা হয়েছে।( সূরা নিসা, আয়াত – ১০৩ )

নামাজ পড়লে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। সুন্দর জীবনযাপন করার জন্য এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজের গুরুত্ব ও সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার গুরুত্ব

নামাজ বেহেশতের চাবিকাঠি। ইসলামের ফরজ ইবাদাতগুলোর মধ্যে নামাজ একটি। নামাজ পড়া ছাড়া কোনো ব্যক্তি মুমিন হতে পারে না। নামাজ সব সময় মানুষকে ভালো পথ দেখায়। রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করে না, ইসলামে তার কোনো অংশ নাই। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজ ত্যাগ করে সে জাহান্নামি” । নামাজ মানবজীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে।  নামাজ মানুষকে খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে, মিথ্যে বলা থেকে বিরত রাখে। মানবজীবনে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম।

নামাজ কয় রাকাত ও কি কি

নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত। ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব, এশা। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ফরজ।
ফজরের নামাজ ৪ রাকাত
২ রাকাত সুন্নত
২ রাকাত ফরজ
যোহরের নামাজ ১২ রাকাত
৪ রাকাত সুন্নত
৪ রাকাত ফরজ
২ রাকাত সুন্নত
২ রাকাত নফল
আছরের নামাজ ৬ রাকাত
৪ রাকাত ফরজ
২ রাকাত নফল
মাগরিবের নামাজ ৭ রাকাত
৩ রাকাত ফরজ
২ রাকাত সুন্নত
২ রাকাত নফল
এশার নামাজ ১১ রাকাত
৪ রাকাত ফরজ
২ রাকাত সুন্নত
২ রাকাত নফল
৩ রাকাত বেতের

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়-সূচি

ফজরের নামাজের সময় সূচি ঃ ফজর পাখি ডাকা ভরে কিছুটা আধার থাকতেই  অর্থাৎ সকালেরের আভা ছড়িয়ে পরার আগেই এই নামাজ আদায় করা ভালো ।তবে এই ক্ষেতে বিশেষে প্রয়োজনে সূর্যের উদীয়মান প্রথম অংশ পূর্ব দিগন্ত রেখা অতিক্রম করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নামাজ আদায় করে নাওয়া যেতে পারে ।সূর্যদয়ের সময় নামাজ পোড়া নিষেধ।

যোহরের নামাজের সময় সূচি ঃ মধ্যাহ্ণে সূর্য তার সর্বচ্চ স্থান থেকে কিছুটা হেলে পড়ার পরই নামাজ আদায় করে নেওয়া ভালো। তবে সূর্য কিরণ যখন বেশ উত্তপ্ত থাকে বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে একটু দেরিতে অর্থাৎ সূর্যের তেজ কিছুটা কমে এলে নামাজ আদায় করে নেওয়ার কিছুটা অবকাশ রয়েছে।

আছরের নামাজের সময় সূচি ঃ সূর্য যখন পশ্চিম দিগন্ত রেখা থেকে বেশ কিছুটা উপরে অবস্থান করে এবং সূর্যের উজ্জ্বলতার তেজ বিরাজমান থাকে , সেই সময় থেকে সূর্যের সোনালি তামাটে বর্ণ মিটে গিয়ে রক্তিম বর্ণ ধারণ করার পূর্বেই নামাজ আদায় করে নেওয়া ভালো। সূর্যাস্তের সময় নামজ পড়া নিষেধ।

মাগরিবের নামাজের সময় সূচি ঃ সূর্য সম্পূর্ণ রূপে অস্ত যাবার পর কিছু সময় এর মধ্যেই নামাজ আদায় করে নেওয়া ভালো। তবে সূর্যাস্তের পর হতে যতক্ষণ পর্যন্ত নিক্ষিপ্ত কোনো তীরের পতিত হবার স্থান দৃষ্টিগোচর হয় অর্থাৎ গোধূলির রেশ বিরাজমান থাকা পর্যন্ত নামাজ আদায় করা যেতে পারে।

এশার নামাজের সময় সূচি ঃ গোধূলি পেরিয়ে রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে আসার পর হতে এই নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং রাতের এক তৃতীয়াংশ সময় থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যে কোনো সময় নামাজ আদায় করে নেওয়া যেতে পারে।

নামাজের নিয়ম

নামাজ পড়ার আগে পবিত্র হওয়ার জন্য ওজু করতে হবে । তারপরে জায়নামাজে দাড়িয়ে জায়নামাজের দোয়া পড়তে হবে। নামাজের নিয়ত করে দুই হাত কান পর্যন্ত উঠাতে হবে। এরপরে তাকবীরে তাহারিমা পড়ার পর হাত বেঁধে সানা পড়তে হবে। তারপরে সূরা ফাতিহা অন্ন যেকোনো একটি সূরা পড়তে হবে।
অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে আঙুল গুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরতে হবে। রুকুতে ৩/৫/৭ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়তে হবে। এবার রুকু থেকে উঠে ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ রাব্বানা লাকাল হামদ’ পড়তে হবে। এরপর তাকবির পড়ে সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় ৩/৫/৭ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়তে হয়। এভাবে ২ বার সিজদাহ করতে হবে ১ রাকাতে।
২ বার সিজদাহ করে দাড়িয়ে যেতে হবে । দ্বিতীয় রাকাত আগের মতোই কিন্তু সানা পড়া যাবে না। আগের মতোই সূরা পড়ে রুকু সিজদাহ করতে হবে। সিজদাহ শেষ করে ডান পা খাড়া করে এবং বাম পা জায়নামাজে বিছিয়ে বসতে হবে। অতঃপর তাসাহুদ পড়তে হবে। তাসাহুদের পর দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়তে হবে। দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে উভইদিকে সালাম ফেরাতে হবে। তারপর বিভিন্ন দোয়া ও ইস্তেগফার পড়ে মোনাজাত করতে হবে।