ইয়েমেনের হুথিদের ওপর বিমান হামলা করলো আমেরিকা ও ব্রিটেন

গাজায় ইসরাইলি হামলার পর থেকে আলোচনায় হুতি বিদ্রোহীরা। লোহিত সাগরে একের পর এক পণ্যবাহী জাহাজে হামলা চালিয়ে পুরো বিশ্বে আতঙ্ক তৈরি করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। গত তিন মাসে এই পথ দিয়ে চলাচলকারী জাহাজগুলোতে প্রায় ২৭ বার হামলা চালিয়েছে হুথিরা। কারা এই হুথি? আর কেনই বা তারা জড়ালো ইসরাইল হামাস যুদ্ধে?

ইয়েমেনের হুথিদের ওপর লক্ষ্য করে আমেরিকা ও ব্রিটেনের বিমান হামলায় কি ঘটলো এবং কোন দেশগুলো কি মন্তব্য করেছেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো এই আর্টিকেলটিতে। এই বিষয়ে জানতে হলে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ইয়েমেনের হুদি বিদ্রোহীদের ওপর লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। দুটি দেশই তাদের হামলাকারী বিমান উড়ে যাওয়ার চিত্র প্রকাশ করেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছে, তাদের মিশনে সমর্থন দিয়েছেন নেদারল্যান্ডস অস্ট্রেলিয়া কানাডা এবং বাহারাইন। ইয়েমেনের রাজধানী সানা সহ অনেক জায়গায় এ হামলা চালানো হয়েছে।

আমেরিকা ও ব্রিটেনকে চরম মূল্য দিতে হবে: হুথি

হুথিরা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে হুশিয়ার করে বলেছে, এই নির্মম হামলার জন্য তাদেরকে চড়ামূল্য দিতে হবে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের হামলা শুরুর পর থেকে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লোহিত সাগরের বিভিন্ন জাহাজে ড্রোন এবং অস্ত্র হামলা চালাতে থাকে। আমেরিকা বলছে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৭ টি জাহাজে হামলা করেছে হুথিরা।

অন্যদিকে হুথিরা দাবি করছে, তারা শুধু জাহাজে আক্রমণ করছে যেগুলোর সাথে ইসরাইলের সংযোগ রয়েছে। গত দুমাস ধরে চলতে থাকা হুথিদের এসব হামলা ঠেকাতে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। হুথিদের বেশ কয়েকবার কড়া হুমকি ও দিয়েছে তারা। যদিও কোন বারই লাভ হয়নি সেক্ষেত্রে।

রুট পরিবর্তন করেছে পণ্যবাহী জাহাজ

গত দু’মাস এ হুথিরা জাহাজে যে হামলা গুলো ঘটিয়েছে সেগুলো ঘটেছে ইয়েমেনের সাথে। লোহিত সাগরে পণ্য পরিবহনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ। প্রতিদিন এই পথ দিয়ে ব্যাপক পরিমানে অপরিশোধিত তেল পরিবহন করা হয়। যা বিশ্বের মোট ব্যবহৃত জ্বালানির প্রায় বিশ শতাংশ।
হুথিদের হামলার ভয়ে বিশ্বের বড় বড় পণ্য পরিবহনকারী জাহাজ লোহিত সাগরের জাহাজ নিতে সাহস পাচ্ছে না সে পথ এড়াতে আফ্রিকার কেপ অফ গুড হোপ এলাকা দিয়ে সাড়ে তিন হাজার মাইল পথ বাড়তে ঘুরে যাহা চলাচল করছে এতে যাতায়াতের সময় কমপক্ষে ১০ দিন বেড়ে যাচ্ছে আর খরচ বাড়ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার লাখ ডলার।

ইয়েমেনের সাবেক মার্কিন কর্মকর্তার মন্তব্য

হুথিদের থামানোর জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে এমন হামলার মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসন চলমান হামাস ইসরাইল যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে গেল বলে মন্তব্য করেন, ইয়েমেনের সাবেক মার্কিন উপরাষ্ট্র দূত নাবিল খুরি। সাবেক এই মার্কিন কূটনীতিক আরো বলেন, আমেরিকা ও ব্রিটেন ভেবেছে হামলা চালিয়ে হুথিদের দমিয়ে রাখা যাবে। কিন্তু এখান থেকে বড় আকারে যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে বলে বার্তা দেন। তিনি এই হামলাকে “মার্কিন কূটনীতির ব্যর্থতা” বলে অভিহিত করেছেন।

হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হুথি বিদ্রোহীরা জানান লোহিত সাগরকে সামরিক করনের দায়ে ওয়াশিংটন ও লন্ডন কেই দিতে হবে। এ হামলার পর থেকে হুথি, আরব ও মুসলিম বিশ্বের শত্রুদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে উল্লেখ করে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত মার্কিন ও ব্রিটিশ ঘাটিগুলোতে হামলা করার ঘোষণা দেয়।

যে দেশগুলো এই হামলায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে

ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস হুথি হামলার সমর্থন করলেও সমালোচনা করেছে রাশিয়া, সৌদি আরব ও ইরান। ইসরাইলের গণহত্যায় মদত অব্যাহত রেখে আমেরিকান ও ব্রিটেন ভিন্ন খাতে অবৈধ করতে এমন হামলা চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরান।

এমন হামলা এ অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোন পথ বয়ে আনবে না বলেও মন্তব্য করেন ইরান। এদিকে উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়ানোর আহবান জানিয়েছে সৌদি আরব। ওয়াশিংটন ও লন্ডনের যৌথ বিমান হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। মস্কো জানায়, হুথিদের ওপর যে কোন হামলা আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে।

এবারের ইয়েমেনে হামলার পর কি হতে পারে?

ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের ওপর হামলার জবাবে যত দ্রুত সম্ভব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এই বিষয়ে জরুরি সভা ডাকার আহ্বান জানিয়েছে মস্কো। এর আগে লোহিত সাগরে হুথিদের হামলা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকে বসে সদস্য দেশগুলোদের নিয়ে। সে সময় হুথিদের হামলা বন্ধে উথাপীথ প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে রাশিয়া ও চীন।