আপনি কি জানেন ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়? দাঁত ও হাড়ের গঠনে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সুস্থ থাকতে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের কোন বিকল্প নাই। শুধু স্বাস্থ্য রক্ষায় নয়, শরীরের বিভিন্ন রোগ সারাতে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের ভূমিকা ব্যাপক।
ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা
ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করার জন্য অনেকে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেয়ে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে কিডনিতে পাথর হতে পারে ও আরো অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। তাই ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার গুলি খাদ্য তালিকায় রাখলে আপনাকে এরকম সমস্যায় পড়তে হবে না। চলুন জেনে নেয়া যা খাবারগুলির নাম। যেমন-
বাদাম
নিয়মিত বাদাম খাওয়ার ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কারণ বাদামের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা প্রচুর। বাদামে থাকে ক্যালসিয়াম যা আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠনকে মজবুত করে। এছাড়াও বাদামে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বাদামে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন ই পাওয়া যায়। আপনি আপনার পছন্দমত চীনা বাদাম, কাঠ বাদাম, পেস্তা বাদাম বা আখরোট খেতে পারেন।
টক দই
মসুর ডাল
ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস হলো মসুর ডাল। এই ডালে ক্যালসিয়াম ছাড়াও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে যেমন- আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক ইত্যাদি। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মসুর ডাল রাখতে পারেন। কারণ মসুর ডালে যে ক্যালসিয়াম থাকে তা আমাদের দেহ গঠনের কাজে লাগে। এছাড়া এটি আমাদের দেহের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে তাই ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার হিসেবে ডাল অনেকের জন্য একটি আদর্শ খাবার।
সবুজ শাকসবজি
সবুজ শাকসবজি মধ্যে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। শাক সবজির মধ্যে বিশেষ করে পাতাযুক্ত শাকসবজিতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। যেসব শাকসবজিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় যেমন- পালং শাক, সরষে শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, কচু শাক, লাল শাক ইত্যাদি। এসব শাকসবজি আমাদের রক্তস্বল্পতা ও অ্যানিমিয়া দূর করতে সাহায্য করে। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি রাখা প্রয়োজন।
আরো পড়ুনঃ দ্রুত ওজন কমানোর উপায়।
দুধ
এছাড়াও ভালো ঘুমের জন্য যেসব ভিটামিন প্রয়োজন তার বেশিরভাগই রয়েছে দুধে। তাই নিয়মিত দুধ খাদ্য তালিকায় রাখলে ঘুম ভালো হয় ও মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। তবে অনেকের দুধ হজম করতে সমস্যা হয় তারা কিন্তু দুধের পরিবর্তে টক দই খেতে পারেন। এতে প্রচুর উপকারিতা পাবেন।
সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছের উচ্চমানের প্রোটিন পাওয়া যায়। যা আপনার হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। বিশেষ করে তৈলাক্ত মাছের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়। তাই ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার হিসেবে আপনি সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। এছাড়াও ছোট মাঝেও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, তাই এই জাতীয় মাছ খাদ্য তালিকায় অবশ্যই রাখার চেষ্টা করবেন।
শুকনো ফল
তিল
ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করার জন্য আপনি তিল খেতে পারেন। যদিও কালো তিলে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে আপনি চাইলে সাদা তিলও খেতে পারেন। এক চা চামচ তিল খেলে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। তিল অবশ্যই ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হবে। তিল খাওয়ার আগে একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন ভারী কোন খাবারের সাথে তিল খাবেন না। বরং হালকা খাবারের সাথে তিল খেতে পারেন।
সজনে পাতা
সজনে পাতার পাউডার খেলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এতে দুধের চেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও জিংক পাওয়া যায়। তাই সজনে পাতাকে বলা হয় “সোর্স অফ এনার্জি”। ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের মধ্যে সজনে পাতা অন্যতম। এছাড়া নিয়মিত এই পাতা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ রসুনের ১০টি উপকারিতা।
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি কিভাবে বুঝবেন
ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত রোগ
আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম কমে গেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিলে অস্টিওপরেসিস, অস্টিওপেনিয়া এবং হাইপোক্যালসেমিয়ার মতো রোগ হতে পারে। এছাড়া আমাদের শরীরে যে সমস্যাগুলো দেখা দেয় সেগুলো হলো-
- শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে
- স্মৃতিশক্তি কমে যায়
- দাঁতের ক্ষয় হয় ও দাঁত ভেঙে যায়
- শুষ্ক ত্বক ও ভঙ্গুর নখ
- হাত ও পায়ের গিঁটে গিঁটে ব্যথা করে
- হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়
- অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হতে পারে
- পেশি দুর্বল হয়ে যায়